পাত্র পাত্রী পছন্দ করার ক্ষেত্রে ইসলাম কি বলে – ম্যারেজ সলিউশন বিডি

পাত্র পাত্রী পছন্দ করার ক্ষেত্রে ইসলাম কি বলে

পাত্র পাত্রী পছন্দ করার ক্ষেত্রে ইসলাম সব সময় সমর্থন দিয়ে আসে। বিয়ে হচ্ছে পৃথিবীর পবিত্র ও শ্রেষ্ঠ সম্পর্ক। এইটা হচ্ছে ছেলে-মেয়ে একসাথে থাকার ও সংসার করার প্রক্রিয়া। হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে মহানবী (সা.) পর্যন্ত সকল ধর্মেই বিবাহ একটি স্বীকৃত বিষয়। এই বিয়ের প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য ইসলামে কিছু নৈতিক নিয়ম ও বিষয় আছে, যা জানা আমাদের সকলের উচিত।

পাত্র পাত্রী পছন্দ করার আগে করনীয়ঃ

ইসলামের আলোকে যদি আমরা বলি পাত্র-পাত্রীর দীনদার কিনা, আচার-ব্যবহার কেমন, সামাজিক প্রেক্ষাপটে তার মূল্যায়ন ও বংশ কেমন। সবচেয়ে প্রাধান্য দিতে হবে তাদের মতামত ও কোন অসামাজিক কাজে জড়িয়ে আছে কিনা। পাত্র-পাত্রী  রাসূল (সা.) পাত্র-পাত্রী পছন্দের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয়ের নির্দেশনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘চার বিষয় বিবেচনা করে কোনো মেয়েকে বিবাহ করা হয়। তা হলো- বংশ, সম্পদ, সৌন্দর্য ও দীনদারী।

অন্যদিকে পাত্র পছন্দের ক্ষেত্র রাসূল (সা.) বলেছেন, পাত্রের দীনদারী ও আখলাক চরিত্রকে গুরুত্ব দিতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের কাছে পছন্দের দীনদার ও চরিত্রবান পাত্র থাকলে, তার কাছে মেয়ে বিয়ে দিয়ে দাও। অন্যথায়, দুনিয়াতে ফেতনা ও বিশৃঙ্খলা বিস্তার লাভ করবে। কোনো কোনো বর্ণনায় আমানতদার ও চরিত্রবান পাত্রের কথা এসেছে। তাই বলা যায় পাত্র-পাত্রী নির্বাচন করার আগে এই বিষয়গুলো ভালো মত খেয়াল রাখা সকলের উচিত।

দ্বীনদার পাত্র-পাত্রী কেন খুঁজবেন?

দ্বীনদার পাত্র-পাত্রী খোঁজার মানসিকতা থাকলে ভালো। ইসলামে আল্লাহ তায়ালা উল্লেখ করেছেন যে, তোমাদের কাছে যদি এমন পাত্র – পাত্রীর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে- যার দ্বীনদারি ও চরিত্র তোমাদের কাছে পছন্দনীয়; তবে তার সঙ্গে তোমাদের পুত্র/ কন্যাদের বিয়ে দিয়ে দাও। যদি তোমরা এরূপ না কর (দ্বীনদার ও চরিত্রবান পাত্র/পাত্রী ফিরিয়ে দাও এবং তাদের সঙ্গে বিয়ে না দাও) তবে এর কারণে জমিনে অনেক বড় ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হবে।’ (তিরমিজি)। তার মানে বুঝা যাচ্ছে ইসলামে সব সময় দ্বীনদার পাত্র/পাত্রীর ব্যাপারে অনেক প্রাধান্য দিয়েছে। দ্বীনদার পাত্র/পাত্রীর সংসারিক ও জীবন পরিচালনা করা সময় আল্লাহতায়ালার এক বিশেষ রহমত থাকে, তাদের সব কাজ ও সমস্যা আল্লাহ সমাধান করে দেন। দাম্পত্য জীবন হয় সুখের। এই জন্যই বিয়ের ক্ষেত্রে দ্বীনদার পাত্র/পাত্রী খোঁজা সবার উচিত।

দ্বীনদার পাত্র/পাত্রী সম্পর্কে নির্দেশনাঃ

হাদিসের আলোকে দ্বীনদার জীবনসঙ্গী নিয়ে অনেক কার্যকরী বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। হজরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নারীদের ও পুরুষদের (সাধারণত) ৪টি বিষয় দেখে বিয়ে করা হয়। তাহলো-
> তার ধন-সম্পদ।
> বংশমর্যাদা।
> রূপ-সৌন্দর্য। এবং
> দ্বীনদারি বা ধার্মিকতা।
তবে তুমি দ্বীনদার (ধার্মিক) নারীকে বিয়ে করে সফল হয়ে যাও; অন্যথায় তুমি লাঞ্ছিত হবে।’ (আবু দাউদ) । পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে বেশ কিছু কারণ আমাদের জানা দরকার, চলুন জেনে নেই।

\"\"

ধর্মীয় সমতাঃ

ধর্মীয় সমতা বলতে ছেলে/মেয়ে মুসলিম, কিন্তু বিয়ে দিতে চায় অন্য ধর্মের। এই ক্ষেত্রে এই বিয়ে না দেওয়াই ভালো। কন্যা এক ধর্মের ছেলে মুসলিম, তাদের মধ্যে বিয়ে না দেওয়াই ভালো। আল্লাহতায়ালা বিয়ের মাধ্যমে নেক সন্তান লাভ করার কথা বলেছেন, কিন্তু ধর্মীয় সমতা না থাকলে বা একই ধর্মের না হলে সন্তান নেক হবার সম্ভাবনা কম থাকে। ধর্মীয় সমতা না থাকলে পরিবারের ও সমাজের অনেকেই বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে নিতে চায় না,  এ ক্ষেত্রে সমস্যা হলো, বংশগত কোনো মর্যাদা না থাকার দরুণ স্ত্রীর কাছে স্বামী কোনো পাত্তাই পায় না। এজন্য পরবর্তীতে আস্তে আস্তে সংসার ভেঙ্গে যায়।

পাত্র-পাত্রীর মাঝে আত্মীয়তার সম্পর্ক না থাকা:

পাত্র-পাত্রী পছন্দের ক্ষেত্রে উত্তম হলো, পাত্র-পাত্রী দূরবর্তী বংশের হওয়া। কারণ, মেয়ে পূর্ব পরিচিত হলে, স্বামী-স্ত্রী সূলভ আচরণ পাওয়া মুশকিল। তাছাড়া, কোনো কারণে তালাকের দ্বারা সম্পর্ক ছিন্ন হলে, আত্মীয়তার সম্পর্কও ঝুঁকিতে পড়ে যায়; অথচ আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জরুরী। দূরবর্তী সম্পর্কের মাঝে বিয়ে দিলে পাত্র-পাত্রী পছন্দ হলে সে বিয়ের অনেক মায়া থাকে। নতুন করে দুইটা পরিবারের মাঝে সম্পর্ক হয়, আর সে সম্পর্ক টিকে থাকে, যদি না ভিতরগত কোন সমস্যা না থাকে। তাই পাত্র পাত্রী পছন্দ এর  ক্ষেত্রে আত্মীয়তার সম্পর্ক না থাকাই ভালো।

ভদ্র পরিবার খোঁজা:

অভিভাবকের করণীয় হলো, সভ্য, ভদ্র পরিবার, যার সদস্যদের স্বভাব-চরিত্র ও উত্তম গুণাবলীর সুনাম রয়েছে, পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের জন্য ঠিক করা। এর উপকার হলো, সন্তানরা স্বভাব-চরিত্র ও উত্তম গুণাবলী সহজে শিখতে পারবে। তাছাড়া, বিজ্ঞান ও প্রকৃতি দ্বারা পরীক্ষিত একটা বিষয় হলো, বাপ-মায়ের অনেক গুণাগুণ ওয়ারিস সূত্রে সন্তানাদি পেয়ে থাকে। হাদীস থেকেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। ইবনে আদীর এক বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা নিজেদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য মেয়ে নির্বাচন করো। কেননা, মেয়ে তার ভায়ের মতো সন্তান জন্ম দেয়। সামান্য কিছু ব্যতিক্রম শব্দে হাদীসটি ইবনে মাজাহ কিতাবেও বর্ণীত হয়েছে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, বিবাহে সমতার অধ্যায়, হাদীস নং১৯৬৮) শরহুল কাবীর কিতাবের একটা বক্তব্য দিয়ে এ প্রসঙ্গের ইতি টানছি, বলা হয়েছে, ‘যখন কোনো মেয়েকে বিবাহ করতে চাও তখন তার বাপ-ভাইকে দেখো।

\"পাত্র

 

পেশার ক্ষেত্রে সমতা:

কোনো কোনো ফকীহ পেশার ক্ষেত্রে সমতাকে অস্বীকার করেন। তাদের যুক্তি হলো, মানুষ যেকোনো মুহূর্তে নিম্ন মানের পেশা ছেড়ে, ভালো পেশা গ্রহণ করতে পারে। তাই বিবাহের ক্ষেত্রে পেশার বিষয়টা ধর্তব্য নয়। ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রাহ.) মতে বিবাহের পাত্র ঠিক করার ক্ষেত্রে পেশার সমতা দেখতে হবে। কোনো নিম্ন মানের পেশার লোক, ভালো ঘরের মেয়ের সমপর্যায়ের হতে পারে না। কারণ, ভালো পেশার পাত্র নিয়ে গর্ব করা হয়; নিম্ন পেশার পাত্র হলে তুচ্ছ জ্ঞান করা হয়। (হিদায়, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৩২১) এ জন্যে, কোনো কোনো ফিকহের কিতাবে মাসয়ালা লেখা হয়, তাঁতী, দর্জিদের সমান নয়। এমনিভাবে নাপিত-ধোপারাও দর্জিদের সমান নয়। (বেহেস্তি জেওর) মোটকথা, মেয়ের যোগ্যতা বুঝে, সেই বিবেচনায় সম্মানের পেশায় কর্মরত পাত্র ঠিক করা।

পাত্র-পাত্রী বয়সে কাছাকাছি হওয়া:

পাত্র পাত্রী পছন্দ করার জন্য বয়স কেমন থাকলে ভালো হয়, যেমন, ‘পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের সময় দু’জনের বয়স কাছাকাছি থাকা উচিত। অতএব উচিত হবে না, যুবতি মেয়েকে বিবাহ দেয়া (যুবক ছেলেকে বিবাহ করানো) এমন লোকের সঙ্গে, যার বয়স কাছাকাছি নয়; দুজনের মাঝে বয়সের দিক থেকে অনেক বেশি পার্থক্য। যেমন পাত্র, মেয়ের বাপ বা দাদার সমপর্যায়ের। সফল বিবাহের পরিচয় হলো, যে বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রী পরস্পর অশেষ ভালোবাসা ও হৃদয়ের টান তৈরি হয়। বর্তমান সময়ে এই পরিবেশ তৈরির জন্য দুজনের বয়স কাছাকাছি হওয়া অনেক সহায়ক। তাই কাছাকাছি বয়সের পাত্র-পাত্রী ঠিক করা উচিত। (আল ফিকহুল হানাফি ফী ছাওবিহিল জাদীদ, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৫১)

সেবা করার আগ্রহী পাত্রী খোঁজা:

যদি ছেলেদের বিয়ের কথা ধরি, বর্তমান সময়ে অনকে অভিভাবক শিক্ষিত পাত্রী খোঁজেন। শিক্ষিত পাত্রী ভালো, তবে এর সঙ্গে স্বামীর সেবার বিষয়টিও খেয়াল করা। কারণ, অল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত মেয়েও যদি স্বামীর সেবা ও তাকে মেনে নিতে পারে তাহলে বিবাহের লক্ষ-উদ্দেশ্য অর্জন হয়ে যাবে। আর শিক্ষিত মেয়েও যদি স্বামীকে মানতে না পারে, তার সেবা না করে তাহলে আস্তে আস্তে সংসারে অশান্তি দেখা দিবে। তাই স্বামীর  সেবা, তাকে মানার যোগ্যতা সম্পন্ন পাত্রী খোঁজা প্রত্যেক অভিভাবকের দায়িত্ব। অন্যদিকে শুধু মেয়েই স্বামীর সেবা করবে তা নয়, ছেলেদেরও তার স্ত্রীর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে, সকল চাহিদা পূরণ করার জন্য মন থাকতে হবে। তাই পাত্র পাত্রী পছন্দ করতে হবে সঠিক মনের মানুসিকতা।

অবশেষে, বলতে পারি পাত্র পাত্রী পছন্দ করার জন্য সঠিক মানসিকতা থাকতে হবে। সমাজ ও পরিবারের প্রতি সম্মান রেখে সঠিক বয়সে বিয়ে করে অসামাজিক কাজ ও যৌনচার থেকে বিরত থেকে পবিত্র সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে জীবন পরিচালনা করতে হবে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আর তাঁর (আল্লাহ) নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও মায়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা রুম, আয়াত : ২১)। ইসলামে বিয়ের বিষয়কে অনেক প্রাধান্য দিয়েছে ও বিয়ের সকল নিয়ম সহজ করে দিয়েছে। তাই আল্লাহ তাআলা প্রতিটি পুরুষ-নারীকে তার পছন্দ মতো মানুষকে বিয়ে করার তাওফিক দিন। সুস্থ ও সুন্দর দাম্পত্যজীবন গড়ার তাওফিক দান করুন।

 

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *