ছেলে বা মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হলেই ক্যারিয়ার এর কথা আলাদা রেখে বিয়ে করার জন্য মনের মত জীবনসঙ্গী খুঁজে পেতে চায়। সবার চাহিদা একেক রকম। কেউ চায় ভালো মনের মানুষ, সাথে তার থাকবে ভালোবাসা, দায়িত্ব ও সংসার সুন্দর করার সঠিক মানসিকতা। সবাই জীবন সঙ্গী খুঁজে পায় কিন্তু মনের মত জীবন সঙ্গী খুঁজে পায় কয়জন।
জীবনসঙ্গী যাচাই-বাছাই করবেন কিভাবে চলুন জেনে নেই ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
১- নিজেকে সঠিক মনের মানুষ হিসেবে তৈরী করুনঃ
জীবনসঙ্গী যাচাই-বাছাই করবেন কিভাবে তার আগে আমাদের এই বিষয়টার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে, সবারই একটা চাহিদা থাকে যে আমার জীবন সঙ্গী হবে ভালো মনের মানুষ। তাকে পবিত্র হতে হবে, কোন খুঁত থাকতে পারবে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো আপনি কি নিখুঁত ব্যাক্তিত্ত সম্পূর্ণ মানুষ? আপনার মাঝে কি কোন খুঁত নেই? অন্যের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করতে চাইলে নিজেকে আগে ভালো হতে হবে। নিজেকে সঠিক মনের মানুষ হিসেবে তৈরি করুন। সৎ, অহংকার ও লোভ-লালসা বন্ধ করে নিজের দোষগুলোকে সংশোধন করে নিন। নিজেকে সমাজের মাঝে ভালো ও সম্মানিত মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে আপনার মনের মানুষ বা জীবনসঙ্গীও আপনার প্রতি আলাদা ভালো লাগা কাজ করবে। আপনি যেমন ভালো জীবন সঙ্গী চান, ঠিক সেও একজন ভালো জীবনসঙ্গী চায়। তারও আলাদা ভালো লাগার চাহিদা আছে। তাই জীবনসঙ্গী যাচাই-বাছাই করতে গেলে আগে নিজের মন সঠিক তৈরী করুন।
২- উন্নত ক্যারিয়ার গড়ুনঃ
জীবনসঙ্গী যদি ভালো মত খুঁজে পেতে চান তাহলে নিজের আলাদা ও উন্নত ক্যারিয়ার গড়ে তুলুন। ভালো চাকুরী, ব্যবসা, বিদেশী বা যেকোন সমাজ স্বীকৃত কাজে নিজেকে মননিবেশ করে ক্যারিয়ার ঘোচানোর প্রক্রিয়া সহজ করতে পারলে নিজের আলাদা একটা পরিচয় সামনে আসে। প্রতিটা পরিবারই চায় তাদের ছেলে – মেয়ের জীবনসঙ্গী হবে উন্নত ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ। বিশেষ করে ছেলেদের ক্ষেত্রে এই চাহিদা বেশি। মেয়ের পরিবার চায় ছেলে ভালো কোন প্রপেশনে থাকবে, তাদের মেয়েকে সুখে রাখবে, ভালো মনের ছেলে হতে হবে। মোটকথা ছেলে একের ভিতর সব হতে হবে। কিন্তু এইটা কি সম্ভব? তাই উন্নত ক্যারিয়ার গড়ে টাকা ও সম্মান থাকলে জীবনসঙ্গী যাচাই-বাছাই করা সহজ হয়ে উঠে। তবে তার আগে নিজেকে ভালো মানুষ হতে হবে।
৩- মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতাঃ
মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতা হচ্ছে প্রতিটা ছেলে- মেয়ের অন্যতম বিষয়। সবাই সব কিছুর সাথে মানিয়ে নিতে পারে না। জীবনসঙ্গী নির্বাচনে আপনাকে আগ থেকে সব কিছুর সাথে মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতা দক্ষতা থাকতে হবে। প্রতিটা মানুষের মনের মিল এক হবে না। কারও এইটা পছন্দ না, কেউ এইভাবে থাকতে পারবে না, কারও আনুষঙ্গিক অনেক সমস্যা থাকতে পারে তাই এই সব কিছু সাথে মানিয়ে সমাধান করতে হবে। সমস্যা যতোই থাকুক সমাধান হাজারটা আছে। আগে থেকেই সমস্যা সমাধানের প্রতি নিজেকে মানিয়ে নিন। আর এই মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতাই আপনাকে জীবনসঙ্গী যাচাই-বাছাই করার ক্ষেতে অনেক উপকারি হয়ে উঠবে।
৪- অন্যের প্রতি যত্নশীলঃ
যত্নশীল বিষয়টা হচ্ছে মানুষের মহানুবভতার অন্যতম গুণ। আপনাকে শুধু নিজের প্রতি না অন্য সব কিছুর প্রতি যত্নশীল হতে হবে। প্রতিটা ছেলে ও মেয়ে যত্নশীল জীবন সঙ্গী পছন্দ করে। যত্ন বিষয়টা হচ্ছে কাউকে আপন করার মূল হাতিয়ার। আপনি যদি জীবনসঙ্গীর প্রতি যত্নশীল হতে পারেন সেই জীবনসঙ্গী সারাজীবন আপনাকে মহান মনে করবে। সংসার ও জীবনকে সুখে রাখতে জীবনসঙ্গী যাচাই-বাছাই করার আগেই সব কিছুর প্রতি যত্নশীল হোন।
৫- সম্মানজনক দৃষ্টি প্রদর্শনঃ
একটি কথা সমাজে প্রচলিত একটি কথা, দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, জীবন বদলে যাবে। আমরা যদি নিজেদের দৃষ্টিকে খারাপ কাজে না লাগিয়ে ভালো কাজে লাগাতে পারি তাহলে জীবনে সব কিছু সুন্দর লাগবে। সম্মানজনক দৃষ্টি প্রদর্শন হচ্ছে মানুষের ভালো গুণ। সমাজে ভালো খারাপ সব বিষয়ের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে হবে ইতিবাচক। জীবন সঙ্গীকে পেতে হলে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি থাকতে হবে সম্মানসূচক দৃষ্টি। তাই সম্মানজনক দৃষ্টি প্রদর্শন করতে শিখুন।
৬- অতিরিক্ত আকাঙ্খা থেকে বিরতঃ
মানুষের আকাঙ্খা থাকবেই, সবার সব ধরনের ছোট-বড় চাহিদা থাকবেই। অতিরিক্ত চাহিদা বা আকাঙ্খা সব সময় ক্ষতিকর। এই উচ্চ আকাঙ্খা থেকেই শুরু হয় লোভ, আর লোভ হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতিকর দিক। লোভী মানুষকে সমাজে সবাই ঘৃণা করে, তাই সব সময় আল্লাহর উপর ভরসা রেখে যা আছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকা উচিত। যা আছে তা নিয়ে খুশী থাকতে পারলেই আল্লাহ আপনাকে সব কিছু দিবে। জীবনসঙ্গীর কাছ থেকে উচ্চ আকাঙ্খা আশা না করাই শ্রেয়।
৭- দায়িত্বশীল ও সিদ্ধান্তকে প্রাধন্যঃ
দায়িত্বশীলতা ও নিজের সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দেওয়াই হচ্ছে সঠিক ব্যাক্তিত্তের প্রকাশ। নিজেকে দায়িত্বশীল করে তুলতে হবে, তাহলে আপনি জীবনসঙ্গীরও দায়িত্ব নিতে পারবেন। ছোটখাটো অনেক কাজ আছে সব কাজকে কাজ মনে করে করা দায়িত্বশীলতার পরিচয়। নিজের সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিয়ে দায়িত্বশীল হতে পারলে জীবনসঙ্গী যাচাই-বাছাই করবেন তা নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না। তাই ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে জীবনে পথচলা অনেক সহজ হয়ে যায়।
পরিশেষে,
জীবনসঙ্গী যাচাই-বাছাই করবেন কিভাবে তা নিয়ে চিন্তা না করে আমাদের উল্লেখিত বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিলে আপনি সঠিক মনের মানুষে নিজেকে পরিণত করতে পারলে জীবন ধারণ সুন্দর হবে। বর্তমান সমাজে পাপচার, অসৎ আর উচ্চ আকাঙ্ক্ষাকে পেছনে পেলে মানুষের কাছে ভালো মনের ব্যাক্তিত্ত সম্পূর্ণ হতে পারলে সারাজীবন জীবনসঙ্গী আপনার আনুগত্য হয়েই থাকবে। তাই স্বাধীনভাবে নিজেকে নিজের পরিচয়েই গড়ে তুলুন।
[/et_pb_text][/et_pb_column][/et_pb_row][/et_pb_section]